একসময়ের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কয়েক মাস ধরে ফুঁসতে থাকা উত্তেজনা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। বাংলাদেশে একজন হিন্দু পুরোহিতকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর দুই প্রতিবেশী পরস্পরের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ তুলেছে।
গত আগস্টে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিত্র শেখ হাসিনা। তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ভারতে তাঁর অব্যাহত উপস্থিতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও মোদি সরকারের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৪ বছর বয়সী নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, হাসিনা ভারতে বসে ক্ষমতায় ফিরে আসার ষড়যন্ত্র করছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতারা ভারতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও তুলেছেন, রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরছে ভারত।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনার সবশেষ স্ফুলিঙ্গ ছিল চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের ঘটনা। তিনি বাংলাদেশের একজন হিন্দু পুরোহিত। ১৭ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ১০ শতাংশের কম।
অতীতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস একটি প্রভাবশালী বৈশ্বিক হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংগঠনটির নাম ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব কৃষ্ণ কনসায়নেস, যা ইসকন বা হরে কৃষ্ণ সোসাইটি নামেও পরিচিত। (বতর্মানে চিন্ময় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ)।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের একটি আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের মামলায় বিচার-পূর্ব কারাগারে পাঠিয়েছেন। এর আগে স্থানীয় একজন রাজনীতিবিদ অভিযোগ (কোতোয়ালি থানায়) দায়ের করেছেন, হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে একটি সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করেছেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে নিচে রেখে ওপরে রেখেছিলেন গেরুয়া রঙের পতাকা (হিন্দুধর্মের প্রতীক)।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকেরা আদালত ঘেরাও করলে ঘটনা প্রাণঘাতী রূপ নেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এ সময় একজন মুসলিম আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর হিন্দুপাড়ায় হামলা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কারা এই আইনজীবীকে হত্যা করেছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সহিংসতার অভিযোগে ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীর আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেন।
এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে একজন ধর্মীয় নেতা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায্য দাবি পেশ করে আইনি ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্যদিকে হিন্দু দেবতা ও মন্দির অপবিত্র করাসহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় জড়িত চরমপন্থীরা মুক্ত রয়েছেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি না দিলে সীমান্ত অবরোধ করার হুমকি দিয়েছেন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমর্থকেরা।বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্বেষ ও নিপীড়নের সম্মুখীন হয়ে আসছেন। ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থানের মুখে সে দেশে তাঁদের সংখ্যা কমেছে।
ইসকনের বাংলাদেশের নেতারা বলেছেন, সংগঠনটি আইন মেনে চলে। তাঁরা আদালতের বাইরে মুসলিম আইনজীবীর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাঁরা প্রথমে বিবৃতি দিয়েছিলেন। পরে তাঁরা তাঁর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন