ভোট চুরি করলে জনগণ জানে কীভাবে সরকার উৎখাত করতে হয়: প্রধানমন্ত্রী


নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে। কখনো ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসেনি। আমাদের বিরুদ্ধে সবসময় একটা অপবাদ দেয়া হয়- আমরা নাকি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছি। আমরা ভোট চুরি করতে যাবো কেন। জনগণ আমাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। তিনি আরও বলেন, ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। জনগণ জানে সেই সরকার কীভাবে উৎখাত করতে হয়। 

আজ দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক জ্ঞানীগুণী বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তত্ত্ব কথা শুনায়, গণতন্ত্রের সবক দেয়, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়। আবার সেই আমাদের বুদ্ধিজীবী, এরা বুদ্ধিজীবী নিজেদের অনেকে বলে। আমি বলি বুদ্ধিজীবী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী। তারা আসলে বুদ্ধিজীবী না, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী।

তারা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে নেতা মেনে তাদের সঙ্গে জড়ো হয় সরকার উৎখাতের জন্য। তিনি আরও বলেন, 'হ্যাঁ, খালেদা জিয়াকে আমরা উৎখাত করেছি, এরশাদকে উৎখাত করেছি, জিয়াকেও আমরা উৎখাত করতে পারতাম। কিন্তু আগেই মরে গেছে। ওখানে একটি দুঃখ যে ওর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আগেই অক্কা পেলো। নিজের লোকদের হাতেই মারা গেল।

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপিকে কেন মানুষ ভোট দেবে। তারা তো টাকা দিয়ে মনোনয়ন দেয়। মির্জা ফখরুল একজনকে মনোনয়ন দেয়, রিজভী আরেকজনকে দেয়, লন্ডন থেকে তারেক রহমান বেশি টাকা নিয়ে আরেকজনকে মনোনয়ন দেয়। বিএনপির দুজন নেতা আমার কাছে নালিশ দিয়েছে। সিলেটের ইনাম আহমেদ চৌধুরী আমাকে বলেছেন, টাকা দেই নাই বলে আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। এটাই হলো বিএনপির চরিত্র।

গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা গুজব ছড়াচ্ছে ব্যাংকে টাকা নেই। সেটা বলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়ার হিড়িক পড়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রাখলে চোরের সুবিধা হবে। আমি আজও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ইনশাআল্লাহ আমাদের ব্যাংকে টাকার কোন সমস্যা নেই। আপনারা গুজবে কান দেবেন না।

তিনি বলেন, বিজয়ের মাসে ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছে। ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মীকে বিজয়ের মাসের অভিনন্দন জানাচ্ছি। কারণ, এ দেশের প্রতিটি সংগ্রামেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। 

তিনি বলেন, প্রতিটি আন্দোলনে শহীদের তালিকা যদি দেখি, সেখানে ছাত্রলীগের শহীদের তালিকাই বড়। ৭৫ এর পর জিয়াউর রহমান যখন অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে, তার প্রতিবাদকারী হাজারো সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীর অফিসারদেরকে জিয়াউর রহমান যেমন হত্যা করেছে, ঠিক একইভাবে ছাত্রলীগের নেতা সেই বাবুসহ অনেককে গুম করে নিয়ে গেছে। তাদের পরিবার লাশও পায়নি। এভাবে অত্যাচার নির্যাতন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক- সেই আন্দোলন আমরা করেছিলাম। সেই আন্দোলনের ফসল ছিল স্বৈরাচার এরশাদের পদত্যাগ হয়েছিল এই ৬ই ডিসেম্বর। কাজেই গণতন্ত্র মুক্তি দিবস হিসেবে এই দিনকে আমরা পালন করতাম। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছিল। জাতির পিতাকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের দোসর, মোশতাক তাকে সেনাপ্রধান বানায়। একাধারে সেনাবাহিনী প্রধান, চিফ মার্শাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, আবার ক্ষমতা দখল করে রাতের অন্ধকারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেই তার অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। আমাদের নিরীহ ছাত্রদের হাতে সে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, মাদক তুলে দিয়েছে, তাদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছিল। সেশনজট শুরু হয়।’

তিনি বলেন, তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। ঠিক একই কায়দায় জেনারেল এরশাদও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আক্রমণ, নানা ধরনের ঘটনা ঘটায়। সেখানও আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার করে। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে যেমন অত্যাচার এবং ৯৬ এ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে, আবার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেও খালেদা জিয়ার পেটুয়া বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয় ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার মনে থাকা উচিত, ২০০১ সালে যখনই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অফিসে ছাত্রদলের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গিয়ে ভিসিকে চেয়ার থেকে সরিয়ে দিয়ে তাদের মনমতো একজনকে বসিয়ে দিলো। রাতের অন্ধকারে ভিসি পদটাও তারা দখল করে নিলো। ২০০২ সালে শামসুন্নাহার হলে গিয়ে মেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করে। একদিকে ছাত্রদল, আরেকদিকে পুলিশ বাহিনী দিয়ে অত্যাচার চালিয়েছিল এই খালেদা জিয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর তাহের ও ইউনূসকে হত্যা করে। তাদের অত্যাচারে সারা বাংলাদেশ ছিল অত্যাচারিত, নির্যাতিত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই তারা ক্ষমতায় আসে, আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। শুধু ক্ষমতায় থাকলেই না, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তাদের যে অগ্নি-সন্ত্রাস, সেটা তো সকলেরই জানা। ২০১৩ সালে আন্দোলনের নামে অগ্নি-সন্ত্রাস করে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে, ৫০০ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারে। সাড়ে ৩ হাজারের ওপর গাড়ি, বাস, লঞ্চ, রেল পুড়িয়ে দেয়, কোনো কিছুই ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এটাই তাদের চরিত্র ।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। পুরনো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী যারা আছেন, তাদের নিশ্চই মনে আছে, খালেদা জিয়া হুমকি দিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে তার ছাত্রদলই নাকি যথেষ্ট। তারা ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রদের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। আমাদের শক্তি জনগণ। আমাদের পেটুয়া বাহিনী লাগে না।’

তিনি বলেন, ছাত্ররা শিক্ষা গ্রহণ করবে। শিক্ষা গ্রহণ করে উপযুক্ত নাগরিক হবে, দেশের দায়িত্বভার ভবিষ্যতে নেবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি ছাত্রদের হাতে কাগজ-কলম তুলে দিয়ে বলেছিলাম, কেবল নিজেরা শিক্ষিত হবে না, যখন ছুটিতে বাড়িতে যাবে, কোনো নিরক্ষর মানুষ পেলে তাদের স্বাক্ষর-জ্ঞান দেবে। ছাত্রলীগ সেটাই করেছিল। নিজ নিজ গ্রামে তারা শিক্ষা ছড়িয়েছিল এবং তার রিপোর্টও আমাকে দিয়েছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bishwajit killer Shakil remanded

WonderCon: 'Prometheus' debuts new trailer, 'Abraham Lincoln: Vampire Hunter'

78.67pc pass HSC exam